রক্তদান কি?

রক্তদান হল একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রক্রিয়া, যেখানে একজন ব্যক্তি তার দেহের অতিরিক্ত রক্ত বা রক্তের উপাদানগুলো (যেমন রেড ব্লাড সেলস, প্লেটলেট, প্লাজমা) অন্য একজনের চিকিৎসার জন্য দান করেন। রক্তদান সাধারণত নিরাপদ এবং এটি একটি সহজ প্রক্রিয়া, যা একজন সুস্থ মানুষের জন্য বেশ সহনীয়। একটি রক্তদানে সাধারণত ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত সংগ্রহ করা হয়, যা একজন ব্যক্তির শরীরের মোট রক্তের মাত্রার খুব সামান্য অংশ।

রক্তদান দুই ধরনের হতে পারে:

1. পুরো রক্তের দান: যেখানে একজন ব্যক্তি তার শরীর থেকে পুরো রক্ত দান করেন, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন উপাদানে বিভক্ত করে ব্যবহার করা হয়।
2. উপাদান ভিত্তিক দান: যেখানে বিশেষভাবে প্লেটলেট, প্লাজমা অথবা রেড ব্লাড সেলস দান করা হয়।

রক্তদানের গুরুত্ব

বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ রক্তের অভাবে মৃত্যু বরণ করে, বিশেষত চিকিৎসা, অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, এবং অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজনে রক্তের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশেও এই সমস্যা অনেক প্রকট। দেশের মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় রক্তের চাহিদা অত্যন্ত বেশি, অথচ স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী সংখ্যা কম, যার ফলে রক্তের সংকট ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রক্তদান একটি জীবনদায়ী কাজ, যা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এখানে কিছু কারণ দেওয়া হলো কেন রক্তদান জরুরি:

১. জীবন বাঁচানো

রক্তদান করা একটি সরাসরি জীবন বাঁচানোর কাজ। দুর্ঘটনায় আহত, গর্ভবতী মহিলাদের রক্তক্ষরণ, ক্যান্সার রোগী, থ্যালাসেমিয়া রোগী, এবং অন্যান্য গুরুতর অবস্থায় রক্তের প্রয়োজন হয়। একজন রক্তদাতা তার রক্তদান করে তিনটি আলাদা রোগীর জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারেন। একটি রক্তদান রোগীর জন্য অত্যন্ত মূল্যবান, বিশেষত যখন জীবন-মরণ পরিস্থিতি তৈরি হয়।

২. রক্তের সংকট মেটানো

বাংলাদেশে প্রতি বছর রক্তের চাহিদা প্রায় ১৫ লক্ষ ইউনিট হলেও, রক্তদানকারীদের সংখ্যা তার তুলনায় অনেক কম। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে দুর্ঘটনা, জরুরি অস্ত্রোপচার, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে রক্তের ঘাটতি মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায়। যদি রক্তদান একটি নিয়মিত অভ্যাস হয়ে ওঠে, তবে এই সংকট অনেকাংশে দূর করা সম্ভব।

৩. স্বাস্থ্য উপকারিতা

রক্তদান শুধু অন্যের জন্য নয়, এটি দাতা ব্যক্তির জন্যও উপকারী। নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরে আয়রনের স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, রক্তদান করার ফলে শরীরে নতুন রক্তকণিকার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা দাতা ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে।

৪. দুর্যোগকালীন সময়ে সহায়তা

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, এবং ভূমিধস ইত্যাদি ব্যাপক আকারে ঘটে থাকে। এসব দুর্যোগে প্রচুর মানুষ আহত হয় এবং তাদের রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে, অনেক প্রাণহানি হতে পারে। নিয়মিত রক্তদান চললে, এই ধরনের দুর্যোগের সময়ে প্রস্তুত থাকা সম্ভব হবে।

রক্তদান করার প্রক্রিয়া

রক্তদান একটি সহজ এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া। সাধারণত, রক্তদান কেন্দ্র বা রক্তদান ক্যাম্পে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। একজন দাতা রক্তদানের জন্য প্রথমে একটি স্বল্প স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, যাতে তার রক্তদান করার জন্য উপযুক্ত কিনা তা নিশ্চিত করা যায়। এই পরীক্ষা শেষে, রক্তদাতাকে একটি নিরাপদ শূন্যস্থানেই রক্ত দেওয়া হয়। রক্তদান প্রক্রিয়ার সময় সাধারণত:

1. ১. স্বাস্থ্য পরীক্ষা: রক্তদানের আগে, দাতা ব্যক্তির রক্তচাপ, হিমোগ্লোবিন এবং শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
2. ২রক্ত সংগ্রহ: ১০-১৫ মিনিট সময়ের মধ্যে রক্ত সংগ্রহ করা হয়।
3. ৩.পরবর্তী যত্ন: রক্তদান শেষে, দাতা কিছু সময় বিশ্রাম নেন এবং পর্যাপ্ত জল পান করেন।

প্রক্রিয়া শেষে, দাতাকে সাধারণত একটি হালকা খাবার বা পানীয় প্রদান করা হয়। রক্তদান করার পর, দাতার শরীরে দ্রুত নতুন রক্তকণিকা তৈরি হতে থাকে, এবং তিনি সাধারণত পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

রক্তদানকারীদের জন্য কিছু পরামর্শ

১. অল্প বয়সী এবং সুস্থ ব্যক্তিরাই রক্তদান করতে পারবেন। বয়স ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। ২. রক্তদান করার আগে এবং পরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। ৩. রক্তদান করার পর খুব ভারী কাজ বা শারীরিক পরিশ্রম না করার চেষ্টা করুন। ৪. রক্তদান করার পূর্বে ভাল করে খেতে ভুলবেন না।